শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৩৮ সকাল
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জরুরি অবস্থায় বাজেয়াপ্ত টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্টের রায়, আপিল করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট : সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায়ের পর রাষ্ট্রের অনুকূলে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাজেয়াপ্তকৃত ওই অর্থ ফেরত চেয়ে রিট আবেদন হয়েছে মোট ৪৪টি। এর মধ্যে ১১টি রিট আবেদনের সঙ্গে জড়িত ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার পক্ষে প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে আপিল বিভাগ রায় দেন। আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সম্প্রতি আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

উচ্চ আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এখনো রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়নি। রিভিউর ফলাফল কী হবে, তা আমরা জানি না। এটি নিয়ে আগাম মন্তব্য করাও ঠিক নয়। এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। টাকা ফেরত চেয়ে দায়ের করা অন্য রিটগুলোর এখনো অগ্রগতি হয়নি। আদালতের যেকোনো আদেশই আমরা আইনগতভাবে মোকাবেলা করব।

রিভিউ আবেদনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, আপিল বিভাগের রায়ের পর রিভিউ করা নিয়ে সংশয়ে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১৫ মে প্রকাশ হলেও রিভিউ করা হয়নি। পরে সরকারের উচ্চমহলের ইঙ্গিতে রিভিউ আবেদন করা হয়েছে।

রিট আবেদনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম আইনজীবী আহসানুল করিম। যোগাযোগ করা হলে গতকাল বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করেছে বলে শুনেছি। তবে এখনো তা শুনানির তালিকায় আসেনি। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এ মামলায় রিভিউ চাওয়ার সুযোগ খুবই কম। সাধারণত এক্সট্রাঅর্ডিনারি জুরিসডিকশন তথা হিসাব গণনায় ভুল হলে, শুনানি চলাকালে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে ছিল না, এমন প্রয়োজনীয় কোনো দলিল উপস্থাপন করা না হয়ে থাকলে কিংবা কোনো ডকুমেন্ট রেকর্ডে ছিল, কিন্তু কোর্ট সেটিকে নজরে আনেননি এমন প্রেক্ষাপটে রিভিউ দায়ের করা হয়। রিভিউ কখনই পিটিশনের পুনঃশুনানি নয়। সুতরাং এর সুযোগটি খুবই ছোট। রিভিউর শুনানি শুরু হলে আমরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরব।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর হিসেবে বড় অংকের অর্থ আদায় করা হয়। আদায় করা এ অর্থ বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংরক্ষিত সরকারি কোষাগারে। অর্থের পরিমাণের বিষয়ে ২০১০ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা, যা

রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা আছে।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, সঠিকভাবে ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ অর্থ আদায় করা হয়নি। তাই এ অর্থ ফেরতযোগ্য। এ যুক্তিতে ২০০৯ ও ২০১০ সালে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ১১টি রিট আবেদন হলে রিটকারীদের কাছে অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে পৃথক ১১টি আপিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৬ মার্চ তা খারিজ করে রায় দেন আপিল বিভাগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আদালতে বলা হয়, আদায় করা ওই অর্থ সংযুক্ত তহবিলে জমা হয়েছে। সংযুক্ত তহবিলের অর্থ প্রদান বা প্রত্যাহার করতে হবে আইনের মাধ্যমে। তাই অর্থ ফেরত দেয়ার সুযোগ নেই।

যদিও আপিল বিভাগের রায়ে আদালত বলেছেন, ‘রিট আবেদনকারীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থ ফেরত দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে জোর করে আদায় করা এসব অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি ভয়ানক বিপজ্জনকও। দেশ থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ওই টাকা সংশ্লিষ্টদের ফেরত দিতে পারত। কিন্তু কী কারণে তা আটকে রেখেছে, তা বোধগম্য নয়। ভবিষ্যত্ ট্যাক্স আদায়ের জন্য ওই টাকা রেখে দেয়ার যুক্তি আমাদের অর্থনৈতিক আইনে সম্পূর্ণ অজানা।’

বাজেয়াপ্তকৃত টাকা ফেরত মামলায় অন্যতম পক্ষ রাষ্ট্র। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর আগে আদালতে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিভিউর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিভিউ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। রিভিউতে কী হয় না হয়, তা আমরা জানি না। এজন্য অপেক্ষা করা ভালো। এ বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্রপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে।

জরুরি অবস্থার সময় টাকা ফেরত চেয়ে ৪৪টি রিট আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত ১১টি আবেদনের শুনানি শেষে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে টাকা ফেরতের আদেশ দেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করলে সেখানেও হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। বাকি ৩১টি রিট আবেদন শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

যে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আবেদনের রায় হয়েছে, তার মধ্যে এস আলম স্টিল লিমিটেডের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৬০ কোটি ও কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ড (বাংলাদেশ) লিমিটেডের কাছ থেকে ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এছাড়া ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের কাছ থেকে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড থেকে ৩৫ কোটি, ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টস (প্রাইভেট) লিমিটেড থেকে ১৮৯ কোটি, মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড থেকে ৫২ কোটি, বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড থেকে ১৫ কোটি টাকা ও বোরাক রিয়েল এস্টেটের কাছ থেকে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা আদায় করা হয় সে সময়। পাশাপাশি রিটকারী ইউনিক ইস্টার্ন (প্রাইভেট) লিমিটেডের কাছ থেকে ৯০ লাখ, ইউনিক সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজের (প্রাইভেট) কাছ থেকে ৭০ লাখ এবং মো. নূর আলী ও অন্যদের কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়। হাইকোর্ট এবং পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টাকা আদায় করা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে— বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ, এবি ব্যাংকের ১৯০ কোটি, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি ৫০ লাখ, যমুনা গ্রুপের ৩০ কোটি, এমজিএইচ গ্রুপের ২৪ কোটি ও এলিট পেইন্টের কাছ থেকে ২৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ওই সময় আদায় করা হয়েছিল। আরো যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সে সময় অর্থ জমা দেয়, তার মধ্যে আছে— ন্যাশনাল ব্যাংক ৩৯ কোটি, কবির স্টিল মিলস ৭ কোটি, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট ৭ কোটি, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ৮ কোটি, পিংক সিটি ৬ কোটি ৪১ লাখ, স্বদেশ প্রপার্টিজ ৯ কোটি, আশিয়ান সিটি ১ কোটি, সাগুফতা হাউজিং ২ কোটি ৫০ লাখ, হোসাফ গ্রুপ ১৫ কোটি, পারটেক্স গ্রুপ ১৫ কোটি ও ইসলাম গ্রুপ ৩৫ কোটি টাকা।

এছাড়া ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ, ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের কাছ থেকে ১৭ কোটি, আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে ১৪ কোটি, শওকত আলী চৌধুরীর কাছ থেকে ৬ কোটি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের কাছ থেকে ১৫ কোটি, বিএনপির সাবেক এমপি সালিমুল হক কামালের কাছ থেকে ২০ কোটি, ওয়াকিল আহমেদের কাছ থেকে ১৬ কোটি, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কাছ থেকে ২০ কোটি ৪১ লাখ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান পারভীন হক সিকদারের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা নেয়া হয়। বণিকবার্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়