শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:০০ সকাল
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দলছুটরা এখন পর্যন্ত সুবিধা করতে পারেননি

মাইকেল : আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ। একটি দল যখন ক্ষমতায়, রাজনীতির মাঠে অপরটি তখন প্রধান বিরোধী দল। অনেক বড় বড় নেতা এ দুটি দল থেকে বেরিয়ে চেয়েছেন নতুন প্লাটফর্ম গড়তে, জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদের বিচারে দলছুট নেতারা তাদের তারকাদ্যুতি দিয়েও পারেননি বড় কোনো দল গড়তে। উপরন্তু দিন দিন হয়ে পড়েছেন নিষ্প্রভ। কেউ কেউ হারিয়ে গেছেন রাজনীতির কক্ষপথ থেকেও। কক্ষচ্যুত অনেক নেতার নাম পর্যন্ত মুছে গেছে মানুষের মন থেকে। বারবার প্রমাণ হয়েছে, এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই শেষ কথা

আরবি মুতাজিলা শব্দের অর্থ দলত্যাগী। আর খারিজি অর্থ বহিষ্কৃত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত কয়েক দশকে শব্দ দুটো প্রচলিত হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক নেতা বহিষ্কৃত হয়েছেন, আবার অনেকে নিজেই দল ছেড়েছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়ার পর রাজনৈতিকভাবে সুবিধা করতে পারেনি মুতাজিলা ও খারিজিরা। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’র মতো এক ব্যক্তিনির্ভর কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দল গঠন করলেও সাফল্যের খাতা একেবারে শূন্য ওইসব নেতার।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। বর্তমানে তিনি সাবেক ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক। একাধিকবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি ঝিনাইদহ-২ আসনের এ প্রার্থী। বর্তমানে ওই আসনে তার ছেলে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দল থেকে অনেকটাই যোগাযোগবিচ্ছিন্ন নূরে আলম সিদ্দিকী বর্তমান সরকারের একজন কড়া সমালোচক হিসেবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত।

বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগে। ’৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করতে তড়িঘড়ি করে একটি পত্রিকা বের করে ওই পত্রিকায় দুটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী চিঠি লেখেন কামাল হোসেন ও কাদের সিদ্দিকী। ওইসময় শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গণফোরাম নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন ড. কামাল। সেই থেকে গণফোরামের সভাপতি হিসেবে ‘জাতীয় ঐক্যের’ চেষ্টা করে আসছেন। সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ঢাকার প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টু। অবশ্য মন্টু নিজেও বাদল হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।

২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, আবদুল মান্নান, আবদুর রহমান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও বীর বাহাদুর। তাদের মধ্যে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মাহমুদুর রহমান মান্না এখন আর আওয়ামী লীগে নেই। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেক রাজনীতিবিদই মূল দল থেকে ছিটকে পড়েন। শুরুতে আওয়ামী লীগের কিছু বর্ষীয়ান নেতা এই অভিযোগে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। পরে যদিও তাদের কয়েকজন এমপি মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন, কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফিরতে পারেননি। অন্যদিকে ওই সময়কার অভিযোগের কারণে এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব কমেনি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের। মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক ঐক্য নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। সুলতান মনসুর রাজনীতিতে অনেকটাই নীরব এখন। তবে বৃহত্তর সিলেটে নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করছেন ডাকসুর এ সাবেক ভিপি।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে বঙ্গবীর খেতাবে পরিচিত কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন ২০০০ সালে। এর পর তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দলও গঠন করেন। দীর্ঘদিন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বিরোধ ছিল। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ধানম-ির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে সাক্ষাৎ হয় কাদের সিদ্দিকীর। শুধু তা-ই নয়, এর পর অসুস্থ কাদের সিদ্দিকীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে খোঁজখবরও নেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ ‘ব্যাকড’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাগরিক সমাবেশে অতিথির সারিতেও দেখা গেছে কাদের সিদ্দিকীকে। সাবেক এ নেতার আওয়ামী লীগে ফিরে আসা নিয়ে রাজনৈতিক গুঞ্জনের মধ্যেই আরও তিন দলের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট নামের একটি নবগঠিত জোটে যোগ দেন কাদের সিদ্দিকী। বিএনপিত্যাগী সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারা সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোটে আরও রয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। নবগঠিত এ জোটকে ‘গণতন্ত্রের সৌন্দর্য’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে এসে তেমন একটা উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়নি আমার এই কথাটা সত্য। তবে লড়াইয়ের সক্ষমতাটা অর্জন হয়েছে। নতুন জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, জোটের কাজ চলছে। গঠনের কাজ হচ্ছে, এটা নিয়ে এখনো মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতি হয়নি।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই। প্রবীণ রাজনীতিবিদ। ১/১১-এর সময় আওয়ামী লীগের মধ্যকার দলীয় সংস্কারপন্থিদের বিরুদ্ধে যে কয়েক নেতা শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন, তাদের অন্যতম তিনি।

২০১৪ সালে নিউইয়র্কে হজ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর একটি মন্তব্যের পর দেশে তুমুল বিতর্ক দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মন্ত্রিত্ব ও দলের সভাপতিমন্ডলী থেকে এমনকি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কৃত হন। এর পর তিনি নিভৃত জীবন যাপন করছেন। জানা গেছে, দল থেকে বহিষ্কার হলেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সর্বশেষ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীসংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায় প্রকাশের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য রাখেন।

সূত্র : আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়