মবিনুর রহমান: ১৯৭১ বাঙ্গালীর সবচেয়ে গৌরব ও বেদনাময় বছর। এ বছর যুদ্ধে অংশে নেয়া বাঙ্গালীরা আবেগটাকেই অস্ত্র বানিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হানাদারবাহিনীর উপর। সেই আবেগই প্রকাশ পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি গুলোতে। চিঠি গুলো সংগ্রহ করা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র থেকে।
১.
প্রিয় স্যার,
সবিনয় নিবেদন এই, আমরা ১৪/০৯/৭১ ইং তারিখে পোঁছিয়াছি। পথে পাকফৌজের ঘেরাওয়ের ৫-৬ ঘণ্টা ফাইট হয়। ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হইয়াছে, ১৭ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হইয়াছে । আমি অনেক পূর্বের সংবাদ দিবার চেষ্টা করিয়াছি। শওকত আলীকে পাঠাইয়া ছিলাম। সে পথিমধ্যে রাজাকারের হাতে ধরা পড়িলে তাহাকে কৌশলে মুক্ত করা হইয়াছে। আমি আফছার উদ্দিন সাহেবের সঙ্গে হাতিয়া মুক্তিফৌজের ডাক্তার হিসাবে কাজ করিতেছি। আমাদের এখানে ১৮০/১৯০ মাইল পর্যন্ত মুক্ত এলাকা। আমি আসিয়া অনেক ছেলে পাঠাইলাম। আমি দেশে গিয়া খুব শোচনীয় অবস্থায় দেখিয়াছি। আমরা ওই সময় দেশে পৌঁছাতে না পারলে বহু লোক রাজাকারে চলিয়া যাইত। আমাদের বালুকায় মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ছাড়িয়া অনেকেই আত্মগোপন করিয়াছিল। আমার বাড়ি ঘর বলতে কিছুই নাই। পাকসেনারা পোড়াইয়া ফেলিয়াছে। নিবেদিত ইতি।
আপনার বিশ্বস্ত
ডা.....উদ্দিন
#
২.
ডালু এমএফ
হেড কোয়ার্টার
জনাব মেজর সাহেব
আমার ছালাম নেবেন। পর সমাচার এই যে গত ২৭-১০-৭১ বিকেলে তিন ঘটনায় সময় একটি পার্টি নিয়ে পেট্রোলে যাই এবং ফরেস্ট অফিসের সামনে বড় উচুঁ একটি একটি পাহাড়ে উঠে অনেক নতুন ও পুরোনো বাংকার দেখতে পেলাম। আর ফেফারি এলাকায় একটি পাহাড়ে তাদের ও পি পোষ্ট তৈরি করেছে। ওরা সব ঠিক করে যাবার পর আমরা ওই টেলিফোনের তার সন্ধ্যা সাতটায় ৩৩ গজ কেটে আনি এবং ওরা যখন জানতে পারল আমরা ওদের ফোনলাইন কেটে দিয়েছি তখন আমাদের ওপর ওরা ফায়ার দেয় এবং আমরা ১৫০ রাউন্ড গুলি ফায়ার দিই। স্টেনগানে ৫০ রাউন্ড ফায়ার দিয়ে ফিরে আসি। খোদার ফজলে আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি। আমরা নিরাপদেই ওদের টেলিফোন লাইন নষ্ট করে ৩৩ গজ তার নিয়ে এসেছি এবং তার আপনাদের এখানে পাঠালাম।
ইতি
স্বাঃ মোহাম্মদ আলী
পানীহান্তা এমএফ ক্যাম্প
৩.
আজিজ ভাই,
সালাম নিবেন ও আর সবাইকে দিবেন। পকিস্তান মিলিটারির পাল্লায় আমরা পড়েছি, না পাক মিলিটারি আমাদেও পাল্লায় পড়েছে, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তবে ওদেও সঙ্গে আমাদের প্রায়ই দেখা হচ্ছে এবং সামনে আরও হবার সম্ভাবনা আছে বুঝতে পারছি। ২৬-১০-৭১ তাং চরকলিয়ার যুদ্ধে আমরা সর্বমোট ১৫৮ (একশত আটান্ন জন হানাদারকে মেরেছি এবং প্রায় এক শতাধিককে জখম করেছি। কোথাও থেকে সাহায্য পাইনি। যাক, আতি ভাইকে আপনার কাছে পাঠালাম। সাচিয়াদহ হাট আদায় না করলে আমাদেও সত্যিকাওে নানা রকম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাই খাজা মিয়াকে বলবেন, যাতে আমাদেও লোক হাট আদায় করতে গেলে কোনো রকম বাধা-বিপত্তি না করে। ভালো আছি। এইমাত্র দুঃসংবাদ পেলাম। তাই আবার চরকুলিয়া দৌড়াচ্ছি।
ইতি
উহম উদ্দিন আহমেদ
জোনল অফিসার
নর্থ খুলনা জোন
আপনার মতামত লিখুন :