মবিনুর রহমান : মাথায় লাল-সবুজ ক্যাপ। পরনে সবুজ পাঞ্জাবি আর লাল কটি। এর ওপর লাল-সবুজ উত্তরীয়। বাংলাদেশের পতাকার রঙ এভাবে যিনি দেহে-প্রাণে ঠাঁই দিয়েছেন তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার। দেশ মাতৃকার টানে মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে সুনামগঞ্জে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ছাড়াও বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের জনক মোস্তাফা জব্বার।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘরের পাশে দেখা গেল এই মুক্তিযোদ্ধাকে। বেশ কিছু তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর তাকে ঘিরে ধরেছে। বিজয় দিবসে এমন মুক্তিযোদ্ধাকে কাছে পেয়ে সবাই আবেগাপ্লুত। অনেকের মোবাইল ক্যামেরায় বন্দী হচ্ছেন তিনি।
কাছে গিয়ে কথা বলি তার সঙ্গে। তিনি বললেন, আজকের এই বিজয়ের দিনে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার ৪৬ বছর আগের স্মৃতি ফিরে পাবে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে এই ভেবে যে একসময় আমাদের এই দেশকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ। এখন এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উদীয়মান একটি দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ এখন তরুণ-তরুণী। আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে একটি অনুষ্ঠান করি। মুক্তিযুদ্ধের লাল-সবুজের পতাকা নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি মুজিব বাহিনীর যোদ্ধা হিসেবে থানার নেতৃত্ব দিতাম। ৬ ডিসেম্বর আমরা যুদ্ধের প্রস্ততি নিচ্ছিলাম। তখন মুজিব বাহিনীর দ্বায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি আমার হাতে একটি গ্রেনেড দিয়ে বললেন, এটা দিয়েই যুদ্ধ করতে হবে। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, এই একটি গ্রেনেড দিয়ে আমি নিজেকে মারা ছাড়া আর কী করতে পারব? তিনি বললেন, পাকিস্তানী বাহিনীদের হাত থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে এনে যুদ্ধ করতে হবে। তখন আমরা তা-ই করেছি।
আরেকটি স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় রাজাকাররা অনেক গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, লুটপাট করেছে। বিজয়ের পরে আমি ১৬০ জন রাজাকারকে আত্মসমর্পন করিয়েছি। পরে মুক্তিযোদ্ধারা সেই রাতেই তাদের হত্যা করেছে। এভাবে বাংলাদেশের সব জায়গায় সেসময় রাজাকারদের হত্যা করা গেলে দেশ আরো এগিয়ে যেত। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী
আপনার মতামত লিখুন :