জাফর আহমদ: বিজয় দিবস যেন উৎসরে আমেজ শিকড়ে যাওয়ার দিন। সকাল থেকেই লাল-সুবজের মিশেলে পোশাক পরা মানুষে পরিপূর্ণ ছিলে বেড়ানোর স্থানগুলো। বাবা-মার সাথে সন্তান, স্বামীর সাথে স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা বা অন্য কোন স্বজনরা সকাল থেকেই বের হয়ে পড়েছিল বিজয়ের এই দিনটি উদযাপন করার জন্য। যেন বদ্ধ জীবনের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বের হয়ে পড়ার মত। শনিবার রাজধানীর বিমান যাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ৩২ নম্বর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
শেরই বাংলা নগরের বিমান যাদঘরে ১০ বছর বয়সের অর্পিতা এসেছে মার সাথে বিজয় দিবস পালন করতে। বাবা নেই, মা-ই তার দুনিয়া। সবুজের উপর লাল মিলিয়ে মায়ের পোশাকের সাথে নিজেও বিজয়ের পোশাক পরে এসেছে। কোন যুদ্ধ বিমান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত, কোনটি বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করতেন, কোনটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যবহার করতো মায়ের কাছে শুনে শুনে শিখছে অপির্তা। এমন হাজারো মানুষে ঠাসা ছিল মিান যাদুঘর।
একই চিত্র ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে। জাতীর এই শিকড়ে আসা অনেক তরুন-তরুনী জানার চেষ্টা করছে কোন স্থানটিতে পাক হানাদার আত্মসমাপর্ন পত্রে স্বাক্ষর করেছিল। কোন স্থানে হানাদার পাক বাহিনী লাইন ধরে পায়ের নীচে অস্ত্র রেখে, মাথা নিচু আত্মসমার্পন করেছিল। কোন স্থানে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের সেই বিশ^সেরা ভাষণটি দিয়েছিলেন। ৭ মার্চ এর ভাষণ দেওয়ার সেই মঞ্চটি কেমন ছিল, কোন পথ ধরে বঙ্গবন্ধু হেটে এসেছিলেন। বিজয় দিবসে ঘুরতে আসা তরুন-তরুনীর মুখে এমন প্রশ্নই ছিল বেশি। এ বছর বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইউনেক্স স্বীকৃতি দেওয়ার পর তরুনরা আরও বেশি আগ্রহী হয়েছে। তবে বয়স্করাও পিছিয়ে নেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেলো।
বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনেও উৎসুক জনতার কমতি ছিল না। স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে বঙ্গবন্ধু বাঙালীকে এই বাড়ি থেকেই মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিলেন। বিশ্বের সব চেয়ে হিংস্র সেনাবাহিনী হিসাবে পরিচিত পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য বঙ্গবন্ধু এই ভবন থেকেই সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীকে সজ্জিত করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালো রাতে এই বাড়িতেই নিহত হয়েছিলেন বাঙালী জাতির জনক। তাই ঘুরতে আসা মানুষের মুখে ছিল নানা প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সবগুলোই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম আর বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রিক। তরুন-তরুনীর সেলফি উন্মাদনার মধেই যেন উদ্ভাসিত হয়েছিল শিকড়ে যাওয়ার স্পন্দন।
আপনার মতামত লিখুন :