শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৪১ সকাল
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাকিস্তানী ১৯৪ যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে কবে?

সাজ্জাদুল ইসলাম নয়ন

ভাগীরথিদের কথা কতটুকু মনে রেখেছে বাংলাদেশ? সেই ভাগীরথি সাহার কথা বলছি; ১৯৭১ সালে যিনি একজন সাধারণ গৃহবধু হয়েও দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার দায়ে ১৩ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর শহরে এদেশীয় রাজাকার আলবদরদের হাতে আটক হন ভাগীরথি।

তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানি সেনা ক্যম্পে। হাজির করা হয় পাক সেনা সুবেদার সেলিমের সামনে। সেখানেই শুরু হয় তার ওপর বর্বর নির্যাতন। মৃতপ্রায় ভাগীরথিকে এরপর নেওয়া হয় ক্যপ্টেন এজাজের কাছে। তিনি ঘোষণা করেন ভাগীরথির মৃতুদণ্ড। তবে সেটি অন্যরকম বর্বর মুত্যুদণ্ড। সেই মোতাবেক মৃতপ্রায় ভাগীরথির দুই হাত দুটো মোটরসাইকেলে বেঁধে পিরোজপুর শহরের সর্বত্র ঘোরানো হয়। বিবস্ত্র, মৃতপ্রায় ভাগীরথির শরীর থেকে রক্ত ঝরে পড়ে পিরোজপুরের রাস্তায়। শরীর থেকে কোন কোন জায়গার মাংসও খসে পড়ে। তবুও থামেনা পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা। এভাবেই একসময় ভাগীরথি মারা যায়। বাংলার এক ভাগীরথির আশ্রয় মেলে বলেশ্বর নদীতে। তবুও থামে না পাকিস্তানি সেনাদের আক্রোশ। ভাগীরথির মৃতদেহ বলেশ্বরে ফেলে ক্রোধের শেষাংশ প্রকাশ করে পাকিস্তানি সেনারা। অসংখ্য গুলিতে ঝাঁজরা হতে থাকে ভাগীরথির নিস্প্রাণ দেহ…।

সেদিন পিরোজপুর শহরে অসংখ্য মানুষের সামনের ওই দৃশ্যটি ১৯৭১ সালে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের খুব ক্ষুদ্র একটি ঘটনা। এ মধ্যযুগীয় হত্যাকাণ্ডের কাছাকাছি সময় ২৪ অক্টোবর স্বরূপকাঠি আকলম স্কুলের শিক্ষক নাজিরপুরের কলারদোয়ানীয়ার মহিউদ্দিন, জহির উদ্দীন বাহাদুরসহ চারজনকে জিপের পেছনে একইভাবে রাস্তায় টেনে টেনে নৃশংসভাবে হত্যার পর বলেশ্বর খেয়াঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নদীতে নিক্ষেপ করে। এভাবে এ ঘাটের পাকবাহিনী অবরুদ্ধ পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর তীরে রায় বাহাদুর সড়কের মাথা, চাঁদমারী ও খেয়াঘাটকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিল। হুলারহাট লঞ্চ ঘাটের পন্টুন, কাউখালী লঞ্চ ঘাটের পন্টুন ছিল একই ধরনের মুক্তিকামী মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পাকবাহিনীর প্লাটফর্ম। ক্যপ্টেন এজাজ বা সুবেদার সেলিম নয়। এরকম প্রায় দুইশো পাকিস্তানি সেনা অফিসার ও সৈনিকরা এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন; যা পরবর্তী বিভিন্ন অনুসন্ধান ও গবেষণায় উঠে আসে।

২৫ মার্চ রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় সহচরদের হাতে এরকম অসংখ্য বর্বরাচিত ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে। সম্ভ্রম হারিয়েছে চার পাঁচ লাখ নারী। লুণ্ঠন ঘড়বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া আর অত্যচার সে তো ছিল নিত্যসঙ্গী।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতটি বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যরকম রাত ছিল। ৪৪ বছর আগের সেই নির্মম নিপীড়ন, লাঞ্ছনা, হত্যা ও লুটপাটের দায় শোধ শুরু হয়েছিল এই দিনটিতে। ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সেদিন প্রথম কার্যকর হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি। এরপর একে একে ফাঁসি কার্যকর হয় আরও বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর। তবে এরা সবাই বর্বর পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় দোসর। পাকিস্তানের বৈরী আচরণ ও নেতিবাচক কুটনীতির কারণে আজ অবধি মূল অভিযুক্ত সেই ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনার বিচার আজও সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লেফন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি (ইস্ট কমান্ড), মেজর জেনারেল নজর হুসাইন শাহ (১৬ ডিভিশন), মেজর জেনারেল মোহাম্মদ হুসাইন আনসারি (৯ ডিভিশন), মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ (ডিজিইপিসেপ), মেজর জেনারেল কাজী আব্দুল মজিদ খান (১৪ ডিভিশন), মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান (সিভিল অ্যাফেয়ার্স), ব্রিগেডিয়ার আব্দুল কাদির খান (৯৩ ব্রিগেট), ব্রিগেডিয়ার আতা মাহমুদ খান মালিক (৭ ব্রিগেড), ব্রিগেডিয়ার বশির আহমেদ (সিএএফ), প্রমূখ। তাদের বিচার তো হয়ইনি উল্টো কসাই টিক্কা খানকে পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। ১৯৮৮ সালে টিক্কা খান পাকিস্তান পিপলস পার্টির হয়ে নির্বাচন করে পাঞ্জাবের গভর্ণর হয়েছিলেন।

পাকিস্তান বাংলাদেশের কূটনীতি সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে অনীহা এবং বৈরীতার পূর্বাভাস পাওয়া যায় যে রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয় তার পরের দিনই। সেদিন পাকিস্তান সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনা পর্বে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কঠোর সমালোচনা করেন পাকিস্তানের সাংসদরা। ইসলামাবাদের রাজপথেও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মিছিল ও প্রতিরোধের হুংকার ভেসে আসে। মানবতাবিরোধী অপরাধে গঠিত ট্রাইবুনালের কঠোর সমালোচনা করে পাকিস্তানে সংসদে একটি বিলও পাশ হয়। তাতে ট্রাইবুনালের কার্যক্রমকে আইন বিচার ও মানবাধিকারবিরোধী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পন করে। এ সময় বাংলাদেশ সরকার ১৯৪ জন পাকিস্তানি আর্মি অফিসার, ৩ জন বিমানবাহিনী অফিসার ও একজন নৌ-অফিসারকে প্রধান যুদ্ধাপরাধী হিসাবে সনাক্ত করে। বাংলাদেশে সংঘঠিত সেই নারকীয় হত্যযজ্ঞের মূল হোতা ছিলেন তারাই। মানবাতাবিরোধী অপরাধের ৫টি গ্রাউন্ডে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

আত্মসমর্পণ সময়ে পাকিস্তানি ছত্রীসেনা ছিল ৯৩ হাজার। এরা সবাই যুদ্ধবন্দি হয়ে ভারতের কারাগারে চলে যায়। পাক ভারত সিমলা চুক্তির ফলে ১৯৭৪ সালে ৯৩ হাজার যুদ্ববন্দির সঙ্গে তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ভারত। তাদের মধ্যে কমপক্ষে একশো জন এখনো বেচেঁ আছে। পাকিস্তানে তারা বহাল তবিয়তেই রয়েছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী, সেসময়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো আশ্বাস দিয়েছিলেন ‘নিজ দেশে তাদের বিচার করবেন’। কিন্তু মিথ্যাচরে পটু ভুট্টো সে কথা রাখেননি। যে কারণে আজ অবধি তাদের বিচার হয়নি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিগ্রেডিয়ার আরপি সিং ভিএসএম (অব:) এর স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৯ মার্চ এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। যাদের মধ্যে জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি ও রাও ফরমান আলী ছিলেন অন্যতম। ১৪ জুন ইন্ডিয়া জেনারেল নিয়াজিসহ ১৫০ জন যুদ্ধাপরাধী পাক সেনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরে সম্মত হয়। বাহাত্তরে জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে শিমলা বৈঠকের দশ দিন আগে ১৯ জুন শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

কিন্তু ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী ৪ লাখ বাঙালিকে নিয়ে শয়তানি কার্ড খেলেছিলো। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনাদের মুক্ত করার জন্য তিনি আটকে পড়া ওই বাঙালিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দরকষাকষি করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরিরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদেরও জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন ভুট্টো।

১৯৭২ সালের ১০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ভুট্টো বলেছিলেন, বাংলাদেশ মনে করে আমাদের বন্দীদের বিচার করতে তাদের কাছে একটি ভেটো আছে, তবে আমাদের হাতেও ভেটো আছে। তিনি বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হতে বাঁধা দিতে চীনকে তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির বিপক্ষে ২৫ আগস্ট বেইজিং প্রথম ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

সেসময় ভুট্টো জোর দাবী করেন যে, পাকিস্তানী বন্দিরা মুক্তি পাওয়ার পরই কেবল পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকার করবে।

১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে, বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের ৬ হাজার পরিবারকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ১০ হাজার বাঙালি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেয়। যদিও এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানে আটকে পড়া অধিকাংশ বাঙালির ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল এক দ্বিপাক্ষিক আলোচনার চার দিন পর, বাংলাদেশ ও ভারত কারাগারের অচলাবস্থা কাটাতে পাকিস্তানি সব বন্দিকে একযোগে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে সেসময় বাংলাদেশ এটা স্পষ্ট করে দিয়ে দেয় যে, ভারত চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় দালালদের মুক্তি দিতে পারবে না। তাদের বিচার বাংলাদেশ করবে।

ভুট্টো অভিযুক্ত পাকিস্তানিদের বিচারের জন্য বাংলাদেশকে দোষারোপ করে এবং ব্যাপক ক্ষিপ্ত হয়। তিনি হুমকি দেন যে, যদি বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচার করে তবে ইসলামাবাদও আটকে পড়া বাংলাদেশিদের অনুরূপ ট্রাইবুনালে বিচার করবে।

ভুট্টোর এই হুমকি যে শুধু ফাঁকা বুলি নয় সেটা প্রমাণের জন্য পাকিস্তানি সরকার তাৎক্ষনিক ২০৩ জন বাঙালিকে জিম্মি করে।

ভুট্টো যুক্তি দেন যে, বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করে তবে পাকিস্তানি জনগণ আটকে পড়া বাঙালিদেরও বিচার করবে। কারণ পাকিস্তানীরা ইতিমধ্যেই “ভীষণ অস্থির” হয়ে উঠেছে, তারা পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি দাবি করেন যে, তাঁর সরকার ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্রের জন্য কিছু উচ্চপদস্থ বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে।

১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট তারিখে, ভারত ও পাকিস্তান ‘দিল্লি অ্যাকর্ডে’ স্বাক্ষর করে, যেখানে বাংলাদেশ-ভারত “একযোগে পুনর্বাসন” প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এই চুক্তির ফলে প্রায় দুই বছর ধরে ভারত ও পাকিস্তান তাদের সব বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পথ সুগম হয়।

ত্রিপক্ষীয় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চুক্তি ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালে শুরু হয়। সেখানে পাকিস্তান ও ভারত একমত হয় যে, ১৯৫ জন পাকিস্তানি নাগরিকের বিচারের বিষয়টি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ২০৩ জন বাঙালি যাদের আটক করা হয়েছিল ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসে।

১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের এক বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ঢাকার কোন অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামাবাদ। যারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের বিচারের কোন প্রচেষ্টা যদি ঢাকা চালায় তবে অনুরূপ বিচার করবে ইসলামাবাদ। তবে পাকিস্তানি নাগরিকরা যদি সত্যিই যুদ্ধাপরাধ করে থাকে তার বিচার করতে হলে সেটা পাকিস্তানই করবে। এই বিচারের জন্য একটি বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও ইচ্ছে প্রকাশ করে পাকিস্তান। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করারও অভিপ্রায় ব্যক্ত করে দেশটি।

এর প্রায় এক বছর পর, অবশেষে পাকিস্তানের প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। আটকে থাকা বাঙালিদের ভাগ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির প্রয়োজনীয়তা থেকেই পাকিস্তান তার দেশেই ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে এই শর্তে পাকিস্তানের প্রস্তাব মেনে নেয় বাংলাদেশ।

ঢাকায় পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ। একটি আনুষ্ঠানিক বোঝাপড়ার অংশ হিসাবে, ২৪ মার্চ, ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে আটককৃত ২০৩ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ১০ এপ্রিল, ১৯৭৪ সালে বন্দি বিনিময়ের এই আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণা করা হয়। একই দিনে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করবেন এবং জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে অতীতের ভুলগুলো ভুলে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানাবেন।

তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সেই অঙ্গীকার পাকিস্তান আজও পূরণ করেনি। ১০০ জনের বেশি যুদ্ধাপরাধী এখনও জীবিত আছেন এবং তারা বাংলাদেশ থেকে লুটতরাজ করা অর্থে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।

এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ডানপন্থী নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সোস্যাল মাধ্যম, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই বিচারের দাবিতে এখনই সরব হতে হবে।

১৯৭৪ সালের ১০ এপ্রিল করা ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের হাত বেঁধে ফেলা হয়। অতএব নাগরিকদের এই বিচারের দাবিতে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭০ বছর পর ২০১৬ সালে যদি নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়, জাপানকে কোরিয়ান যৌন দাসীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হয় এবং তাদের ক্ষতি পূরণ দিতে বাধ্য হয় তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সমান অপরাধ ও গণহত্যা চালানোর জন্য কেন ৪৬ বছর পরে পাক জেনারেল নিয়াজী ও তার সঙ্গীদের বিচার করা সম্ভব হবে না? কেন ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হবে না? এটা অবশ্যই সম্ভব। তাদের বিচার করার সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি

লেখক : সাংবাদিক, বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়