পরাগ মাঝি : জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের বৈঠকটি ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যতিক্রম। কারণ সর্বশেষ ওই বৈঠকে জেরুজালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতা করেছে তার মিত্ররা।
জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত ওলোফ স্কুগ মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং নিরাপত্তা পরিষদের নীতিকে অগ্রাহ্য করে।’
স্কুগ আরও বলেন, ‘জেরুজালেম ইস্যু এমন একটি চূড়ান্ত বিষয়, বিভিন্ন দলের ঐক্যমতেই কেবল এর সমাধান সম্ভব।’ স্কুগ এসময় ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগের বছর ১৯৪৭ সালের কথা বলেন। সেবছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ আইন জারি করা হয়। ওই আইন অনুযায়ী, জেরুজালেমকে আলাদা বিশেষত্ব প্রদান করা হয়। বলা হয়, ওই শহরটি একই সঙ্গে ইহুদি, মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র ভূমি।
এ অবস্থায় জেরুজালেম নিয়ে মার্কিন সিদ্ধান্ত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ফ্রান্স। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখারও আহŸান জানিয়েছে দেশটি।
ফ্রান্সের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে যুক্তরাজ্যও। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত শান্তি স্থাপনে কোন ভূমিকা রাখতে পারবেনা।’ জেরুজালেমে ইসরায়েল ও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব থাকা উচিত বলেও মনে করে দেশটি।
সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জেরুজালেমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা জর্ডান। এ প্রসঙ্গে দেশটির বক্তব্য হলো- ‘পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে দৃঢ় করায় ট্রাম্পের পদক্ষেপ আইনি বৈধতা হারিয়েছে।’ এমনকি সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করা মিশরও। দেশটির মতে, ‘এমন সিদ্ধান্তে জেরুজালেমের নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটবে না।’
দ্বৈত রাষ্ট্রের সমাধানকে প্রাধান্য দিয়ে জার্মানি বলেছে, জেরুজালেমের মর্যাদা শুধু এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্য করে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। আর এই ইস্যুতে এবার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই জাতিসংঘের আইন লঙ্ঘণের অভিযোগ আনলো ইরান।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সৌদি আরবও। দেশটির পক্ষ থেকে জেরুজালেম সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বলা যায়, এ ইস্যুতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো একমাত্র দেশ ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘এটিই আমাদের প্রারম্ভিক লক্ষ্য ছিল, শান্তির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
ফিলিস্তিন বলেছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওয়াশিংটন তার নেতৃত্বদানকারী ভূমিকার জলাঞ্জলি দিয়েছে। ভয়েজ অব আমেরিকা
আপনার মতামত লিখুন :