নাফরুল হাসান : স্বাধীনতার ৪৬ বছরে পুরনো শিল্পের কাক্সিক্ষত বিকাশ না হলেও জায়গা করে নিয়েছে নতুন শিল্প। শিল্প উদ্যোক্তাদের মতে, সড়ক, অবকাঠামো, এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার কারণে পিছিয়ে পড়ছে শিল্পায়ন। এদিকে শিল্পখাতরে বিকাশ বাড়াতে দ্রুত গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের তাগিদ দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাবনাময় শিল্পখাত চিহ্নিত করে বিশেষ সুবিধা প্রদান এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান তাদের।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে শিল্প বলতে বোঝানো হতো মূলত পাট ও চামড়াকে। সাড়ে চার দশকে ক্রমশ গৌরব হারিয়েছে সোনালী আঁশ পাট। প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি চামড়া শিল্পেরও। তবে আশির দশকে দেশীয় শিল্পের অগ্রযাত্রায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে তৈরি পোশাক। সম্ভাবনাময় শিল্প হিসাবে একে একে উত্থান হয়েছে বস্ত্র, ওষুধ, প্লাস্টিক, জাহাজ ও তথ্যপ্রযুক্তিখাতের। এভাবে কৃষি নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ক্রমশ দেশ এগুচ্ছে শিল্পের দিকে।
এ সম্পর্কে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘টেক্সটাইল সেক্টর ও গার্মেন্টস সেক্টরে একটা গর্ব করার মত একটা জায়গায় পৌঁছে গেছি।’
এদিকে এভবিসিসিআইয়ের আরেক সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জিন্স নির্মাতা। বাংলাদেশের ঔষধ বিদেশের মার্কেটে যাচ্ছে।’
তবে উদ্যোক্তাদের মতে, শিল্পের কাক্সিক্ষত অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করছে অবকাঠামোসহ নানা সমস্যা। প্রত্যাশা, প্রস্তাবিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হলে অনেকদূর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ আরো বলেন, ‘শিল্পায়ন যে গতিতে হয়েছে সেইভাবে আমাদের গ্যাস বিদ্যুতের সরবারহ বাড়েনি।’
হালকা প্রকৌশল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি খাদ্যসহ অনেক শিল্প সম্ভাবনা দেখালেও অর্থনীতিবিদের মতে সরকারি নীতি সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এগুতে পারছেনা। টেকসই শিল্পায়নে শিল্পের বহুমুখীকরণের তাগিদ তাদের।
এ সম্পর্কে সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘বিভিন্ন সেক্টরে ঋণ নিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে।’
দেশজ উৎপাদনে শিল্প খাতের মোট অবদান বাড়লেও উৎপাদনশীল শিল্পের অবদান মাত্র ১৬ শতাংশ। ২০৩০ এ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অবদান দ্বিগুণ করতে হবে। দক্ষ জনবলের ঘাটতির কারণে বর্তমানে পোশাকসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পে কাজ করছে দু লাখের বেশি বিদেশী। যারা বছরে নিয়ে যাচ্ছে কমপক্ষে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, ‘আগামীর শিল্পোন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে, শুধু অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ালে হবেনা, কারিগরি শিক্ষাকেও যুগোপযোগী করতে হবে।’
সূত্র : সময় টিভি
আপনার মতামত লিখুন :